Showing posts with label Success Story. Show all posts
Showing posts with label Success Story. Show all posts

Tuesday, December 16, 2014

কবুতর পালন করে মাসে আয় ২৫ হাজার টাকা





আপনিই যখন আপনার ভাগ্য তৈরির কারিগর



প্রথমে গ্রামের বসতবাড়িতে শখ করে দেশি প্রজাতির কবুতর পোষা। তারপর ডিম থেকে ছানা ফুটিয়ে কবুতরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি। হাটে নিয়ে বিক্রি এবং আয় হতে থাকা। অবশেষে কবুতর পালনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ। এই খাত থেকে এখন মাসিক আয় অন্তত ২৫ হাজার টাকা।


এসএসসি পাসের পর নানা সংকটে তারেককে পড়াশোনায় ইস্তফা দিতে হয়। অল্প পড়ালেখার কারণে চাকরির চেষ্টা করেননি। বড় ব্যবসা করার পুঁজি ছিল না তাঁর। আয়-রোজগারের চিন্তা করতে গিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কবুতর নিয়ে ভাবনার নেশাকে পেশায় পরিণত করেন তারেক। দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন কবুতরের বাণিজ্য। উপজেলা সদরে দোকান ভাড়া নিয়ে কবুতরের দোকান গড়ে তোলেন। এখন দেশি কবুতরের পাশাপাশি বিদেশি নামি-দামি কবুতরে সাজানো তাঁর দোকান। দুই হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা জোড়া দামের কবুতর পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। শখে যাঁরা কবুতর পোষেণ, তাঁদের নামি-দামি কবুতরের জন্য তারেকের কাছে আসতে হয়। উপজেলা শহরে কবুতরের এমন ব্যতিক্রমী দোকান গড়ে ওঠার কারণে এলাকার অনেকেই এখন নামি-দামি কবুতর শখ করে পালনের দিকে ঝুঁকছেন। আর তারেক কবুতরের ব্যবসায় প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। শখে কবুতর পোষেণ এমন লোকজনই তাঁর কবুতরের দোকানের প্রধান ক্রেতা। নামি-দামি কবুতরের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির কবুতরও বিক্রয় করেন তিনি।


মঠবাড়িয়া শহরের তুষখালী সড়কের আহম্মেদ মার্কেটে তারেকের দোকানে দেশি কবুতরের পাশাপাশি বিদেশি নামি-দামি অন্তত ১০ প্রজাতির কবুতর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ময়ূরপঙ্খী, র‌্যাং, গিরিবাজ, সিরাজি, বল, কগা, হোমার, জালালি ও কাপ্তান উল্লেখযোগ্য। এক জোড়া ময়ূরপঙ্খী পাঁচ থেকে সাত হাজার, র‌্যাং ১০ থেকে ১২ হাজার, গিরিবাজ ৫০০ থেকে ৭০০, সিরাজি চার হাজার, বল ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার, কগা এক থেকে দেড় হাজার, হোমার দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার, জালালি এক হাজার থেকে দেড় হাজার ও কাপ্তান দুই-তিন হাজার টাকায় বিক্রয় হয়।


তারেক জানান, কবুতরের তেমন রোগ-ব্যাধি না থাকায় ঝুঁকি কম। কবুতর খুবই নিরীহ প্রজাতির পাখি। লালন-পালন করাও সহজ। নামি প্রজাতির কবুতর তিনি খুলনা, যশোর ও বরিশাল থেকে পাইকারি কিনে নিজের দোকানে প্রতিপালন করে বিক্রয় করেন। তাঁর ইচ্ছা উন্নত প্রজাতি ও দামি সব কবুতরের একটি খামার গড়ে তোলা।


তারেক এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বলেন, কবুতরের ব্যবসার শুরুতে অনেক ঝুঁকি মনে করেছিলাম; কিন্তু এখন তা মনে হচ্ছে না। যেকোনাে যুবক এ ব্যবসা করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন। তবে ব্যবসায় অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পুঁজির প্রয়োজন পড়বে। সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনে ঋণসহায়তা পেলে যেকোনো বেকার যুবক এ লাভজনক ব্যবসা করতে পারেন।


উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কবির আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, যুবক তারেক কবুতরের দোকান করে তাঁর বেকারত্ব দূর করেছেন। এটি আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে যেকোনো বেকার যুবকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণ দেওয়া হয়। তবে কবুতর পালনের জন্য কোনো ঋণ নেই। তবে বেকার যুবকদের কবুতর পালন প্রকল্পে ঋণ পেতে হলে প্রশিক্ষণের আওতায় আসতে হবে।

কবুতর পালন করে কোটিপতি





বাক বাকুম ভাগ্যবতী; বানাও মোরে কোটীপতি



ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের বেকার যুবক বাদশা আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া (৩৫) বিদেশী জাতের কবুতর পালন করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। 

নানা রকম চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বেকার দুদু মিয়া এলাকার অন্য বেকার যুবকদের কাছে আজ একজন আদর্শ কবুতর খামারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। 

প্রতিদিনই দেশের দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসছেন পারমথুরাপুর গ্রামে দুধু মিয়ার বিদেশী জাতের কবুতরের খামার দেখতে।

তবে এই খ্যাতি আর বিড়ম্বনা নিয়ে দুদুু মিয়ার মধ্যে কোন ক্ষোভ নেই। হাসিমুখে সবাইকে স্বাগত জানান তিনি।

দুদু মিয়া এলাকার অনেক বেকার যুবককে নিজে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছেন কবুতর পালনে এগিয়ে আসার জন্য।


শুরুর দিকের কথা:::::
হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের এলাম মন্ডলের পুত্র দুদু মিয়া পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণী পাশ করে পিতার আর্থিক দৈনদশার কারণে নবম শ্রেণীতে আর ভর্তি হতে পারেননি। সেটা ২১ বছর আগের কথা। তারপর তিনি পরিবারের আর্থিক দৈনদশা কাটাতে কাঁধে তুলে নেন নাঙ্গল আর জোয়াল। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তিনি শুরু করেন কৃষিকাজ।

কিন্ত সেময় চাষাবাদে ঠিকমত আর্থিক উন্নতি না ঘটায় শুরু করের মুরগীর ব্যবসা। নিজ গ্রামের বিভিন্ন বাড়ী থেকে মুরগী কিনে এনে তিনি ঝিনাইদহ শহরে মুরগী বিক্রি শুরু করেন। এই ব্যবসায় কিছুটা সফলতা আসায় তিনি ঝিনাইদহসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন জেলার থেকে মুরগী কিনে এনে ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় মুরগী সরবরাহ দিতে শুরু করেন।

একবার কুষ্টিয়ায় মুরগী কিনতে গিয়ে তিনি কুষ্টিয়া জেলখানা রোডের নাজমুল হোসেনের কাছে কিছু বিদেশী প্রজাতির কবুতর দেখতে পান। নাজমুল হোসেন সৌখিনতার কারণে বিদেশী কবুতর পুষতেন। সেই থেকে দুধু মিয়ার কবুতর চাষের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

বিগত ২০০৭ সালে তিনি বানিজ্যিকভাবে বিদেশী ময়ূরী ও সিরাজী জাতের তিন জোড়া কবুতর দিয়ে বানিজ্যিক চাষ শুরু করেন।


বর্তমান কথা:::::
সরেজমিনে দুদু মিয়ার কবুতর খামার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশী কবুতর রয়েছে তার খামারে। আশ্বর্যজনক হলেও সত্যি এর মধ্যে আফ্রিকার ৪০ হাজার টাকা জোড়া মূল্যের কেরিয়ার হুমার, হল্যাল্ডের ৩০ হাজার টাকা মূল্যের লাল, কালো ও হলুদ কোটারবল, ১০ হাজার টাকা মূল্যের আফ্রিকার মডেনা, অষ্ট্রেলিয়ার কিং, ৫ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী সিরাজী, পারভিন ও সিংহ, ৬ হাজার টাকা মূল্যের হল্যান্ডের বিউটি হুমার, ৮ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী শ্যালো ও নান, ২ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বোম্বাই ও লোটন, ১০ হাজার টাকা মূল্যের হল্যান্ডের ব্লু কিং, ম্যাগপাই ও আওল, ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী ব্লু সিরাজী, কালো কিং , লাল কিং, হলুদ কিং, হোয়াইট কিং, সাটিং ও হাইপিলার, ১ হাজার টাকা মূল্যের অষ্ট্রেলিয়ান সাদা ঘুঘু, ঘিয়ে ঘুঘু এবং দেশী সোয়াচন্দন প্রজাতির নামী দামী বিলুপ্ত প্রজাতির প্রায় ৫ শতাধিক বিদেশী কবুতর রয়েছে।

এছাড়া আমাদের দেশীয় নানা প্রজাতির প্রায় ৭ শতাধিক কবুতরের খামার গড়ে তুলেছেন দুদু মিয়া। তিনি জানালেন, তার সংগ্রহে থাকা বিদেশী কবুতর গুলোর বর্তমান বাজার মূল্যে ২০ লক্ষ টাকার উপরে। দুদু মিয়া কবুতরের ব্যবসা করে ইতিমধ্যে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পারমথুরাপুর গ্রামে গ্রামে তৈরি করেছেন একতলা পাঁকা বাড়ি, মাঠে ৩ বিঘা জমি, ৪০টি ছাগল, ২ টি গরু, বাড়িতে পোষা শতাধিক মুরগী, নিজের মুরগী সরবরাহের ব্যবসা ও ব্যাকের কাছে গচ্ছিত টাকা সব মিলিয়ে তিনি বর্তমানে প্রায় কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তার কাছ থেকে জানা গেল, তিনি এসব বিদেশী জাতের কবুতর নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, মেহেরপুর ও ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন।

আর এসব বিদেশী কবুতর বাচ্চা দিলে তিনি জেলার বাইরের পাইকারদের কাছে এক হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা জোড়ায় এগুলো বিক্রি করে দেন।


পদক প্রাপ্তি:::::
সফল কবুতর চাষী হিসেবে বাদশা আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া গত ২০০৮ সালে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আবু সাইদ ফকির ও বর্তমান জেলা প্রশাসক রমারানী রায়’র নিকট থেকে চলতি বছর মোট দুই বার জেলার শ্রেষ্ট কবুতর চাষী হিসেবে নগদ ৮ হাজার টাকা ও সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন।

এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মকরন্দ বিশ্বাস জানান, দুধু মিয়ার কবুতর পালনের এই সাফল্য দেশের বেকার যুবকদের জন্য একটি মাইলফলক।

দেশের বেকার যুবকদের কাছে দুদু মিয়া একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হতে পারেন। তবে তার দেখাদেখি দেশের অন্য বেকার যুবকরাও যদি ব্যতিক্রমি এই কবুতর পালনে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে।



Copyright © 2014 All about Pigeon