Wednesday, December 17, 2014

কবুতরের ডিমের মূল্য যখন তিন হাজার টাকা!




রূপকথা বলে, মুরগী দেয় সোনার ডিম;
বাস্তবে দেখলাম, তিন হাজার টাকার কইতরের ডিম!! 


একটি বাসার ছাদের সিড়ি ঘরে শত-শত বাহারি কবুতরের হাট বসতে পারে নিজে চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। ছোট্ট ঐ সিড়ি ঘরে নানা রঙ্গের এবং ঢঙ্গের কবুতর পাওয়া যায়। অনেকটা শখের বসে শুরু করলেও এখন তা একটি সফল ও লাভজনক ব্যবসা। এমনটিই জানতে পারলাম কবুতরের মালিকের সাথে কথা বলে। টংগী চেরাগআলীর একটি বাসার ছাদে নামি-দামি এসব কবুতরের সাথে সাক্ষাত হলো। 


এই সেই ঐতিহাসিক ডিম যাহার মুল্য তিন হাজার


দামি কবুতর বলতে কি বুঝায় তা হয়ত অনেকেরই ধারনা নাই। কবুতর সম্পর্কে তেমন ধারনা না খাকলে এর দাম শুনে হয়ত আকাশ থেকে পরবেন। কবুতরের দামে পরে আসি আগে একটি ডিমের দাম শুনে রাখেন। মালিকের তথ্য মতে একটি ডিমের দাম প্রায় তিন হাজার টাকা। এবার বুঝুন কবুতরের দাম কত হতে পারে। 





প্রায় এক বছরের বেশি সময় আগে শখের এই কবুতর দেখতে গিয়েছিলাম। দেখেই মাথায় আসছিল কোন পত্রিকায় এ নিয়ে একটা লেখা লিখব। কিন্তু এই ব্লগার বরাবরই অলস। মহা অলস! পত্রিকায় তো দেয়া হয়ইনি। বরং অযত্নে পরে ছিল মোবাইলে তোলা এই ছবিগুলো। ফ্যামিলির ছবি দেখতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পরল। এবার আর আলস্য নয়। দুলাইন হলেও লিখতেই হবে..






মোবাইলে সব কবুতরের নাম, মালিকের মিনি সাক্ষাৎকার ও সংক্ষিপ্ত সব তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। এতদিনে কি আর এসব থাকে! মোবাইলের মেমরী খোয়া যাওয়ায় সবকিছু হারিয়েছি। শুধু ছবিগুলোর কপি হার্ডডিস্কে ছিল বলে দুলাইন লিখার যোগান পেলাম। যতদুর মনে পড়ে কবুতরগুলোর মধ্যে ছিল হোমার, পোমেরানিয়ান ডাটিস, সাক্সন ডাটিস, লোটন, জেকোভিন, মুকি, গিরিবাজ, টেম্পালার ইত্যাদি। বিস্তারিত ছবিতে দেখুন।






















































Tuesday, December 16, 2014

কবুতরের রোগসমূহ ও এর প্রতিকার এবং চিকিৎসা





তোমাকে যে উড়তে হবেই



ঠান্ডাজনিত রোগঃ (Colds)  

কবুতরের মানুষের মত ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে। সাধারনতঃ ভেজা বাসস্থান বা ভেজা আবহাওয়াজনিত কারণে (অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম) ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে। এসময় কবুতরের নাক দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়। এ সময় এক্সপেকটোরেন্ট (Expectorant) জাতীয় সিরাপ খাওয়ালে সহজেই ঠান্ডাজনিত রোগ ভাল হয়ে যায়।


ডাইরিয়াঃ (Diarrhoea)  

কবুতরের ডাইরিয়াজনিত রোগ সাধারনতঃ অম্লদূর্গন্ধযুক্ত, মল্ডি (Moldy) এবং অপরিনিত শস্য-দানা খেয়ে ডাইরিয়া দেখা দেয়। ডাইরিয়া হলে ওরস্যালাইন-এন জাতীয় খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে। তবে সবধরনের শস্য দানা খাওয়া প্রতিদিনের খাদ্যে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। খাদ্যের শস্যদানা এবং ধান, গম প্রভৃতি শস্যদানা কবুতরের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল।

গোয়িং লাইটঃ (Going light)

এই রোগে কবুতরের চামড়ার রং কাল হয়ে যায় যা দেখতে গরুর মাংসের মত। এ সময় কবুতর খুব অসুস্থ দেখতে লাগে এবং প্রায়শই ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়। যেহেতু এ সময় ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয় তাই অন্যান্য রোগ এ সময় কবুতরকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই খাদ্যে ওরস্যালাইন এবং কুসুম কুসুম গরম দুধ ও রুটি কিছুক্ষণ পরপর দেওয়া যেতে পারে।

ক্যাংকারঃ (Canker) 

এটি একটি প্রোটোজোয়াজনিত রোগ যা সাধারনতঃ বয়স্ক কবুতরের দেখা যায়। মুখে বা গলায় (Throat) যদি হলুদাভ সাদা বস্তু (Substance) দেখা যায় তবে সহজেই এই রোগের সনাক্ত করা যায়। প্রোটোজোয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এন্টিপ্রোটোজোয়াল (Antiprotozoal) ঔষধ ক্যাংকার এ সেবন করা যেতে পারে।


রোপঃ (Roup) 

শীতকালে যদি বিছানা ভেজা থাকে তবে প্রায়শঃই রোপ(Roup) নামের রোগটি কবুতরে দেখা যায়। এ রোগের লক্ষণ নিউমোনিয়া বা ঠান্ডাজনিত রোগের লক্ষণের মত। নাক দিয়ে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হয়। এই সময় অসুস্থ কবুতরকে তার বাসস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে বাসস্থান, খাবার পাত্র পানির পাত্র সহ সব যন্ত্রপাতি জীবাণূনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা উচিত।


নিউমোনিয়াঃ 

যদি গলার মধ্যে বিশেষ করে থ্রট (Throat) এ কোন ধরনের গুটি দেখা যায় বা কফ জাতীয় কোন পদার্থ দেখা যায় এবং নাকের ছিদ্রে শ্লেষ্মাজাতীয় কোন পদার্থ দেখা যায় এবং যদি কবুতর এর শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে কবুতরটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ সময় গা অনেক গরম হয় এবং কবুতরটি খুবই অসুস্থ দেখা যায়। তাই এ সময় তাকে শুষ্ক বিছানাসহ গরম খাবার প্রদান করা উচিত।


এগ বাইন্ডিংঃ (Egg binding) 

কোন কোন সময় কবুতর এর ডিম পারতে কষ্ট হয়। সাধারনতঃ কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত রোগ হলে বা খাদ্যে সুষম পুষ্টি সঠিকভাবে না পেলে এগ্ বাইন্ডিং রোগে আত্রান্ত হয়। এ সময় পায়ুপথ গরম পানি দিয়ে ধৌত করে বা পায়ুপথে অলিভ ওয়েল লাগায়ে সহজেই ডিম বের করে আনা যেতে পারে।


ম্যালেরিয়াঃ 

ম্যালেরিয়া সাধারনতঃ এক ধরনের প্রোটোজোয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই জীবানু রক্তের লোহিত কনিকাকে ধ্বংস করে। ফলে কবুতরটি আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। হাটতে পারে না এমনকি দৃষ্টির অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে চলাফেরা করে। এটিকে সহজেই এন্টি ম্যালেরিয়া জাতীয় ঔষধ যেমন- মেলানোসাইড দ্বারা সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। তাছাড়া এই রোগ থেকে মুক্ত রাখতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। যে খাঁচায় পাখিকে রাখা হয় সে সব খাচা নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।


কক্সিডিওসিসঃ (Coccidiosis) 

কক্সিডিওসিস রোগটি প্রায় সব সময় কবুতরে দেখা যায়। এটি একটি প্রোটোজোয়াজনিত রোগ। কম বয়সী কবুতর এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগটি হলে পায়খানার সাথে রক্ত বা সাদাচুনা দেখা দেয়। এ রোগে কবুতর ঠিকমত দাড়িয়ে থাকতে পারে না, ওজন হ্রাস পায় এবং কম খাদ্য খায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে কবুতর তাড়াতাড়ি মারা যায়। তাই আগে থেকেই প্রিভেনটিভ ডোজে কক্সিডিওসিস এর ঔষধ থাওয়ানো উচিত।


পিজিয়ন পক্সঃ (Pigeon Pox)

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা চামড়া ও মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রান্ত করে। পিজিয়ন পক্স আক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকতে হলে পিজিয়ন পক্স ভ্যাক্সিন দিতে হবে। যা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।


সর্বোপরি আপনার সঠিক দেখাশুনা আপনার কবুতরকে এ সকল রোগ থেকে দূরে রাখবে। তাই কবুতর পালনের সিদ্ধান্তের পূর্বেই নিজেকে দেখে নিন আপনি প্রস্তুত কিনা।

মনে রাখবেন, নিবিড় পরিচর্যার কোন বিকল্প নেই। 

ভাইরাস | ব্যাকটেরিয়া | ফাংগাস




একটি আক্রমন আপনার সমস্ত কবুতরকে আক্রান্ত করে মেরে ফেলতে পারে 



কবুতরের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ সাধারনত নিম্নলিখিত কারণে হয়ে থাকে-

  • খাদ্যদূষণ জনিত কারণে
  • পানিদূষণ জনিত কারণে
  • বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের কামড়ের কারণে
  • কোন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হলে
  • শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার জন্য নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বা নিঃসৃত পদার্থের কারণে ইত্যাদি।




কবুতরের ভাইরাসজনিত রোগ নিম্নলিখিত  কারণে হয়ে থাকে-

  • দুষিত পানি পান করলে 
  • অসুস্থপাখির নাকের শ্লেষ্মা বা অন্যান্য বায়ুঘটিত (Airborne) জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে ইত্যাদি।


কবুতরের ফাংগাসজনিত (Fungus) রোগসমূহ নিম্নলিখিত  কারণে হয়ে থাকে:

  • ভেঁজা, স্যাতস্যাতে জায়গায় বসবাস করলে
  • দূষিত বায়ুপ্রবাহের কারণে
  • দূষিত পানির মাধ্যমে

কবুতরের প্রোটোজোয়া (Protozoan) জনিত রোগ সাধারনতঃ 

কবুতরের মা-বাবা (Parent birds) হতে আসে। তাছাড়া মা কবুতর যখন মুখের মাধ্যমে সন্তানকে খাদ্য খাওয়ায় তখন প্রোটোজোয়াজনিত রোগ মা হতে সন্তানে চলে আসে।


কবুতরের পরজীবীজনিত (Parasitic) রোগ সমূহ সাধারনতঃ 

কৃমির ডিম বা লার্ভা বা পরজীবীর জীবনচক্রের কোন ধাপ (Stage) যদি কবুতর খেয়ে ফেলে তাহলে পরজীবীজনিত রোগ সমূহ হয়ে থাকে।


তাছাড়া কবুতরের কোন কোন সময় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাবজনিত রোগ হতে পারে। যেমন: Plethora নামক রোগ কবুতরের হয়ে থাকে।

কবুতরের কতিপয় রোগ ও এর প্রতিকার





কবুতরকে আপনার শিশু ভেবে যত্ন নিন



আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশের মানুষ গ্রামীণ পরিবেশে দু’চারটা করে দেশী কবুতর পালন করত। বিদেশী দামী কবুতরও গ্রামে ও শহরে দু’জায়গাতেই পালন করছে। শহরে শখের বশে দু’চারটা করে বিদেশী বিভিন্ন জাতের কবুতর পালন করলেও আজকাল অর্থনৈতিক লাভের আশায় অনেকেই বেশ বড় করে কবুতরের খামার করে আসছে।5555

















কবুতর একটি অতি সংবেদনশীল পাখি যা সহজেই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। অতি সতর্কতার সাথে সঠিকভাবে যত্ন না করলে সাধারনতঃ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

কবুতর পালন করে মাসে আয় ২৫ হাজার টাকা





আপনিই যখন আপনার ভাগ্য তৈরির কারিগর



প্রথমে গ্রামের বসতবাড়িতে শখ করে দেশি প্রজাতির কবুতর পোষা। তারপর ডিম থেকে ছানা ফুটিয়ে কবুতরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি। হাটে নিয়ে বিক্রি এবং আয় হতে থাকা। অবশেষে কবুতর পালনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ। এই খাত থেকে এখন মাসিক আয় অন্তত ২৫ হাজার টাকা।


এসএসসি পাসের পর নানা সংকটে তারেককে পড়াশোনায় ইস্তফা দিতে হয়। অল্প পড়ালেখার কারণে চাকরির চেষ্টা করেননি। বড় ব্যবসা করার পুঁজি ছিল না তাঁর। আয়-রোজগারের চিন্তা করতে গিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কবুতর নিয়ে ভাবনার নেশাকে পেশায় পরিণত করেন তারেক। দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন কবুতরের বাণিজ্য। উপজেলা সদরে দোকান ভাড়া নিয়ে কবুতরের দোকান গড়ে তোলেন। এখন দেশি কবুতরের পাশাপাশি বিদেশি নামি-দামি কবুতরে সাজানো তাঁর দোকান। দুই হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা জোড়া দামের কবুতর পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। শখে যাঁরা কবুতর পোষেণ, তাঁদের নামি-দামি কবুতরের জন্য তারেকের কাছে আসতে হয়। উপজেলা শহরে কবুতরের এমন ব্যতিক্রমী দোকান গড়ে ওঠার কারণে এলাকার অনেকেই এখন নামি-দামি কবুতর শখ করে পালনের দিকে ঝুঁকছেন। আর তারেক কবুতরের ব্যবসায় প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। শখে কবুতর পোষেণ এমন লোকজনই তাঁর কবুতরের দোকানের প্রধান ক্রেতা। নামি-দামি কবুতরের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির কবুতরও বিক্রয় করেন তিনি।


মঠবাড়িয়া শহরের তুষখালী সড়কের আহম্মেদ মার্কেটে তারেকের দোকানে দেশি কবুতরের পাশাপাশি বিদেশি নামি-দামি অন্তত ১০ প্রজাতির কবুতর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ময়ূরপঙ্খী, র‌্যাং, গিরিবাজ, সিরাজি, বল, কগা, হোমার, জালালি ও কাপ্তান উল্লেখযোগ্য। এক জোড়া ময়ূরপঙ্খী পাঁচ থেকে সাত হাজার, র‌্যাং ১০ থেকে ১২ হাজার, গিরিবাজ ৫০০ থেকে ৭০০, সিরাজি চার হাজার, বল ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার, কগা এক থেকে দেড় হাজার, হোমার দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার, জালালি এক হাজার থেকে দেড় হাজার ও কাপ্তান দুই-তিন হাজার টাকায় বিক্রয় হয়।


তারেক জানান, কবুতরের তেমন রোগ-ব্যাধি না থাকায় ঝুঁকি কম। কবুতর খুবই নিরীহ প্রজাতির পাখি। লালন-পালন করাও সহজ। নামি প্রজাতির কবুতর তিনি খুলনা, যশোর ও বরিশাল থেকে পাইকারি কিনে নিজের দোকানে প্রতিপালন করে বিক্রয় করেন। তাঁর ইচ্ছা উন্নত প্রজাতি ও দামি সব কবুতরের একটি খামার গড়ে তোলা।


তারেক এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বলেন, কবুতরের ব্যবসার শুরুতে অনেক ঝুঁকি মনে করেছিলাম; কিন্তু এখন তা মনে হচ্ছে না। যেকোনাে যুবক এ ব্যবসা করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন। তবে ব্যবসায় অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পুঁজির প্রয়োজন পড়বে। সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনে ঋণসহায়তা পেলে যেকোনো বেকার যুবক এ লাভজনক ব্যবসা করতে পারেন।


উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কবির আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, যুবক তারেক কবুতরের দোকান করে তাঁর বেকারত্ব দূর করেছেন। এটি আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে যেকোনো বেকার যুবকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণ দেওয়া হয়। তবে কবুতর পালনের জন্য কোনো ঋণ নেই। তবে বেকার যুবকদের কবুতর পালন প্রকল্পে ঋণ পেতে হলে প্রশিক্ষণের আওতায় আসতে হবে।

কবুতর পালন করে কোটিপতি





বাক বাকুম ভাগ্যবতী; বানাও মোরে কোটীপতি



ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের বেকার যুবক বাদশা আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া (৩৫) বিদেশী জাতের কবুতর পালন করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। 

নানা রকম চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বেকার দুদু মিয়া এলাকার অন্য বেকার যুবকদের কাছে আজ একজন আদর্শ কবুতর খামারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। 

প্রতিদিনই দেশের দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসছেন পারমথুরাপুর গ্রামে দুধু মিয়ার বিদেশী জাতের কবুতরের খামার দেখতে।

তবে এই খ্যাতি আর বিড়ম্বনা নিয়ে দুদুু মিয়ার মধ্যে কোন ক্ষোভ নেই। হাসিমুখে সবাইকে স্বাগত জানান তিনি।

দুদু মিয়া এলাকার অনেক বেকার যুবককে নিজে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছেন কবুতর পালনে এগিয়ে আসার জন্য।


শুরুর দিকের কথা:::::
হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের এলাম মন্ডলের পুত্র দুদু মিয়া পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণী পাশ করে পিতার আর্থিক দৈনদশার কারণে নবম শ্রেণীতে আর ভর্তি হতে পারেননি। সেটা ২১ বছর আগের কথা। তারপর তিনি পরিবারের আর্থিক দৈনদশা কাটাতে কাঁধে তুলে নেন নাঙ্গল আর জোয়াল। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তিনি শুরু করেন কৃষিকাজ।

কিন্ত সেময় চাষাবাদে ঠিকমত আর্থিক উন্নতি না ঘটায় শুরু করের মুরগীর ব্যবসা। নিজ গ্রামের বিভিন্ন বাড়ী থেকে মুরগী কিনে এনে তিনি ঝিনাইদহ শহরে মুরগী বিক্রি শুরু করেন। এই ব্যবসায় কিছুটা সফলতা আসায় তিনি ঝিনাইদহসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন জেলার থেকে মুরগী কিনে এনে ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় মুরগী সরবরাহ দিতে শুরু করেন।

একবার কুষ্টিয়ায় মুরগী কিনতে গিয়ে তিনি কুষ্টিয়া জেলখানা রোডের নাজমুল হোসেনের কাছে কিছু বিদেশী প্রজাতির কবুতর দেখতে পান। নাজমুল হোসেন সৌখিনতার কারণে বিদেশী কবুতর পুষতেন। সেই থেকে দুধু মিয়ার কবুতর চাষের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

বিগত ২০০৭ সালে তিনি বানিজ্যিকভাবে বিদেশী ময়ূরী ও সিরাজী জাতের তিন জোড়া কবুতর দিয়ে বানিজ্যিক চাষ শুরু করেন।


বর্তমান কথা:::::
সরেজমিনে দুদু মিয়ার কবুতর খামার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশী কবুতর রয়েছে তার খামারে। আশ্বর্যজনক হলেও সত্যি এর মধ্যে আফ্রিকার ৪০ হাজার টাকা জোড়া মূল্যের কেরিয়ার হুমার, হল্যাল্ডের ৩০ হাজার টাকা মূল্যের লাল, কালো ও হলুদ কোটারবল, ১০ হাজার টাকা মূল্যের আফ্রিকার মডেনা, অষ্ট্রেলিয়ার কিং, ৫ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী সিরাজী, পারভিন ও সিংহ, ৬ হাজার টাকা মূল্যের হল্যান্ডের বিউটি হুমার, ৮ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী শ্যালো ও নান, ২ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বোম্বাই ও লোটন, ১০ হাজার টাকা মূল্যের হল্যান্ডের ব্লু কিং, ম্যাগপাই ও আওল, ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানী ব্লু সিরাজী, কালো কিং , লাল কিং, হলুদ কিং, হোয়াইট কিং, সাটিং ও হাইপিলার, ১ হাজার টাকা মূল্যের অষ্ট্রেলিয়ান সাদা ঘুঘু, ঘিয়ে ঘুঘু এবং দেশী সোয়াচন্দন প্রজাতির নামী দামী বিলুপ্ত প্রজাতির প্রায় ৫ শতাধিক বিদেশী কবুতর রয়েছে।

এছাড়া আমাদের দেশীয় নানা প্রজাতির প্রায় ৭ শতাধিক কবুতরের খামার গড়ে তুলেছেন দুদু মিয়া। তিনি জানালেন, তার সংগ্রহে থাকা বিদেশী কবুতর গুলোর বর্তমান বাজার মূল্যে ২০ লক্ষ টাকার উপরে। দুদু মিয়া কবুতরের ব্যবসা করে ইতিমধ্যে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পারমথুরাপুর গ্রামে গ্রামে তৈরি করেছেন একতলা পাঁকা বাড়ি, মাঠে ৩ বিঘা জমি, ৪০টি ছাগল, ২ টি গরু, বাড়িতে পোষা শতাধিক মুরগী, নিজের মুরগী সরবরাহের ব্যবসা ও ব্যাকের কাছে গচ্ছিত টাকা সব মিলিয়ে তিনি বর্তমানে প্রায় কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তার কাছ থেকে জানা গেল, তিনি এসব বিদেশী জাতের কবুতর নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, মেহেরপুর ও ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন।

আর এসব বিদেশী কবুতর বাচ্চা দিলে তিনি জেলার বাইরের পাইকারদের কাছে এক হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা জোড়ায় এগুলো বিক্রি করে দেন।


পদক প্রাপ্তি:::::
সফল কবুতর চাষী হিসেবে বাদশা আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া গত ২০০৮ সালে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আবু সাইদ ফকির ও বর্তমান জেলা প্রশাসক রমারানী রায়’র নিকট থেকে চলতি বছর মোট দুই বার জেলার শ্রেষ্ট কবুতর চাষী হিসেবে নগদ ৮ হাজার টাকা ও সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন।

এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মকরন্দ বিশ্বাস জানান, দুধু মিয়ার কবুতর পালনের এই সাফল্য দেশের বেকার যুবকদের জন্য একটি মাইলফলক।

দেশের বেকার যুবকদের কাছে দুদু মিয়া একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হতে পারেন। তবে তার দেখাদেখি দেশের অন্য বেকার যুবকরাও যদি ব্যতিক্রমি এই কবুতর পালনে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে।



বসতবাড়িতে অল্প শ্রমে ও স্বল্প ব্যয়ে কবুতর পালন




শখ যখন দিবে টাকা; ঘুরবে এবার আরো জোরে তোমার জীবন চাকা



আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির মতো অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা হয়ে থাকে। এখনও পুরনো পদ্ধতিতে কবুতর পালন করা হচ্ছে। তবে ইদানীং জনসাধারণের মাঝে উন্নত পদ্ধতিতে কবুতর পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। বসতবাড়িতে অল্প শ্রমে ও স্বল্প ব্যয়ে অবসর সময়ে কবুতর পোষা যায়। কবুতর পুষে একদিকে পরিবারের আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়, অপরদিকে বাড়তি আয়েরও সুযোগ হয়। বাচ্চা কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও বলকারক হওয়ায় বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

জীবন চক্র : পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়া বেঁধে একসঙ্গে বাস করে। এদের জীবনকাল ১২ বছর। স্ত্রী-পুরুষ উভয় মিলে খড়কুটা সংগ্রহ করে ছোট জায়গায় বাসা তৈরি করে। ডিম পাড়ার স্থান ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ডিম পাড়া শুরু করে। এরা ২৮ দিন অন্তর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ (দুই)টি ডিম দেয় এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত দেয়া ডিমে বাচ্চা উত্পাদান ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। ডিমে তা দেয়ার ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরের খাদ্য থলিতে দুধ জাতীয় বস্তু তৈরি হয় যা খেয়ে বাচ্চারা ৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়েই ১০ দিন পর্যন্ত এদের বাচ্চাকে ঠোঁট দিয়ে খাওয়ায়, এরপর বাচ্চারা দানাদার খাদ্য খেতে আরম্ভ করে।



কবুতরের জাত : পৃথিবীতে প্রায় দুশ’ থেকে তিনশ’ জাতের কবুতর আছে। মাংস উত্পাদনের জন্য সিলভারকিং, হামকাচ্চা, ডাউকা, কাউরা, গোলা, গোলী, পক্কা, লক্ষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চিত্তবিনোদনের জন্য ময়ুরপঙ্খী, সিরাজী, লাহোরী, ফ্যানটেইল, জেকোডিন, মুক, গিরিবাজ, টেম্পলারলোটন—এসব জাতের কবুতর রয়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশে উল্লেযোগ্য কবুতরের একটি জাত হচ্ছে ‘জালালী কবুতর’। এ নামটি হজরত শাহ্জালাল (রহ.) এর পুণ্য স্মৃতির সঙ্গে জড়িত।


পালনের সুবিধা : কবুতর পালন আনন্দদায়ক। কবুতরের গোশত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রতিমাসে গড়ে ২টি বাচ্চা পাওয়া যায় এবং ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়। তাদের রোগবালাই কম। খাবার করচ কম এবং থাকার ঘর তৈরি করতে খরচ কম লাগে। স্বল্প পুঁজি ও শ্রমে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।


কবুতরের বাসস্থান : কবুতরের থাকার ঘরটি উঁচু করে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখিদের নাগালের বাইরে থাকে। ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হালকা কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায়। প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য ৩০ সেমি. চওড়ার এবং উচ্চতায় ৩০ সেমি. মাপের খোঁপ বানাতে হবে। কবুতরের ঘর পাশাপাশি বা কয়েকতলা বিশিষ্ট করা যেতে পারে। প্রতিটি খোপের জন্য একটি করে দরজা থাকবে। অধিক কবুতর পুষলে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকটি খোপ বেশি রাখতে হবে। প্রতিমাসে ১-২ বার করে ঘরে কবুতরের বিষ্টা পরিষ্কার করতে হবে এবং যাতে কবুতরের ঘর পরিষ্কার ও শুকনো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র কবুতরের ঘরের কাছেই রাখতে হবে। এছাড়াও কবুতরের গোসলের জন্য পানি ও ধূলি এবং বাসা বানানোর জন্য খড়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।


খাদ্য : কবুতর সাধারণত গম, মটর, খেসারি, সরিষা, ভুট্টা, কলাই, ধান, চাল, কাউন, জোয়ার—এসব শস্যদানা খেয়ে থাকে। এরা মুক্ত আকাশে বিচরণ করে এবং পছন্দমত স্থান থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির জন্য এদের খাবারের শতকরা ১৫ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ আমিষ থাকা প্রয়োজন। তবে মুরগির জন্য নির্ধারিত তৈরি সুষম খাবার খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি কবুতর দৈনিক গড়ে ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে। কবুতর ছানার দ্রুত বৃদ্ধি, হাড়শক্ত ও পুষ্টি এবং বয়স্ক কবুতরে সুস্বাস্থ্য এবং ডিমের খোসা শক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের চূর্ণ, চুনাপাথর, শক্ত কাঠকয়লার চূর্ণ, হাড়ের গুঁড়ো, লবণ এসব মিশিয়ে ‘গ্রিট মিকচার’ তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতিদিন কিছু কিছু কাঁচা শাক-সবজি কবুতরকে খেতে দেয়া ভালো।


খরচ : ১০ জোড়া কবুতরের জন্য ১টি ঘর বানাতে (খাবারের পাত্র, পানির পাত্রসহ) আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জোড়া কবুতরের ক্রয়মূল্য প্রায় ১০০০ টাকা এবং ১০ জোড়া থেকে মাসে প্রায় ৮ থেকে ৯ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে। এগুলো বিক্রি করে মাসে গড়ে ৬০০ টাকা আয় করা যাবে।






Copyright © 2014 All about Pigeon